a mobile banking service

Free Web Hosting

Free Hosting

ফেসবুক: সাবধান কিন্তু!

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এক নারী কর্মকর্তা বহুদিন পর্যন্ত জানতেই পারেননি, তাঁর ছবি আর নাম ব্যবহার করে আপত্তিকর নানা কাজ করে যাচ্ছেন তাঁরই এক পুরুষ সহকর্মী। সামাজিক যোগাযোগের জনপ্রিয় মাধ্যম ফেসবুকে ওই নারীর মতো প্রতিদিনই কেউ না কেউ অপরিচিত বা পরিচিতজনদের মাধ্যমে প্রতারিত হচ্ছেন।
ফেসবুকের যে আইডিগুলোতে ব্যবহারকারী তার নাম, পরিচয়, লিঙ্গ, ছবি, ব্যক্তিগত তথ্য, কর্মক্ষেত্র, পড়াশোনার স্থানসহ কোনো কোনো ব্যক্তিগত বিষয়ে ভুয়া বা মিথ্যা তথ্য দিয়ে থাকে, সেগুলোকে ফেক আইডি বলা হয়। তথ্য ও যোগাযোগ খাতে গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক (বিডিওএসএন) বলছে, বাংলাদেশে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৫৬ লাখ। এর মধ্যে ১১ লাখই ভুয়া।
ভুয়া আইডি দিয়ে প্রতারণার বিষয়টি এখন এমন এক স্তরে পৌঁছেছে যে ভুক্তভোগীরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থার (বিটিআরসি) দ্বারস্থ হচ্ছেন।
এ প্রসঙ্গে বিটিআরসির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দীন আহমেদ মুঠোফোনে প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, ‘আজকাল অনেকেই ভুয়া আইডির বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন। তাঁরা অভিযোগও করছেন। অভিযোগগুলো আমরা তদন্ত করে দেখি এবং ফেসবুক কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানাই।’ একই মন্তব্য করেছেন পুলিশের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাবের কর্মকর্তারা।
ফেসবুকে ভুয়া আইডির ব্যবহার ঠিক কতজন করছে, তার আসল সংখ্যা খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে দেখা গেছে, ঢাকা শহরের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারী লেখাপড়া করছেন ‘ঢাকা কলেজে’।
ফেসবুকে ভুয়া তথ্য দিয়ে অনেকে মজা পেলেও প্রতারণার শিকার কেউ কেউ মানসিক রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের মনোরোগ চিকিত্সক মুনতাসির মারুফ প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে প্রতারিত হলে প্রথমেই প্রতারণার শিকার ব্যক্তিটি বিষণ্নতায় ভুগতে শুরু করেন। কারও কারও ক্ষেত্রে এর ব্যাপকতা এতটাই হয় যে তাঁদের মধ্যে সামাজিক ভীতি দেখা দিতে পারে। তাঁরা হয়তো আর কখনোই কারও সঙ্গে সহজে মিশতে পারেন না।
প্রতারণার ধরন: রাজধানীর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন এক নারী। হঠাত্ই একদিন তিনি ফেসবুকে নিজের ছবি ও ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহার করা একটি ভুয়া আইডি খুঁজে পেলেন। ওই ভুয়া আইডি থেকে নিয়মিত অশ্লীল স্ট্যাটাস আপলোড করা হতো। প্রতারণার শিকার ওই নারী এ ঘটনায় ভীষণ বিব্রত বোধ করছিলেন। অশ্লীলতার মাত্রা এতটাই ছিল যে তিনি শেষ পর্যন্ত পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। তদন্তে বের হয় ভুয়া ফেসবুক আইডিটি তাঁর একজন পুরুষ সহকর্মীর।
ভুয়া ফেসবুক আইডি নিয়ে প্রায়ই বিড়ম্বনার শিকার হন বিভিন্ন জনপ্রিয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও অভিনয়শিল্পীরা। একজন অভিনেত্রী নিজের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা জানাতে গিয়ে বলেন, ‘আমার নামে অন্তত ২০-২৫টি ফেসবুক আইডি খোলা হয়েছে। থানায় জিডি করেছি। র‌্যাবের কাছে অভিযোগ করে ৮-১০টি আইডি বন্ধ করাতে পেরেছি। এর মধ্যে দুটো আইডিতে আমার ফোন নম্বর ব্যবহারসহ অশ্লীল কথাবার্তাও পোস্ট করা হয়। আমি ও আমার পরিবার ভীষণ সমস্যায় পড়ে এতে।’
প্রতারণার শিকার এক পুরুষ জানান, তিনি ফেসবুকে নিয়মিত একটি মেয়ের সঙ্গে কথা বলতেন। একপর্যায়ে কথা বলাটা নেশার মতো হয়ে দাঁড়ায়। তাঁকে ভালোবাসতে শুরু করেন। কিন্তু হঠাত্ মেয়েটি উধাও হয়ে যায় ফেসবুক থেকে। এ নিয়ে তিনি দীর্ঘদিন মানসিক যন্ত্রণায় ভুগেছেন। এভাবে কেউ প্রতারণা করতে পারে, এটা ছিল তাঁর ধারণার বাইরে।
প্রতারকেরা কী বলে: ফেসবুকে বেশ কয়েকটি আইডি খুলেছেন এমন এক ব্যক্তির সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, সুন্দরী এক নারীর ছবি দিয়ে তিনি সমাজের কিছু মুখোশ পরা ভালো মানুষের সঙ্গে কথা বলেন। বাজিয়ে দেখেন তাঁরা আদতেই ভালো কি না। এ ছাড়া তাঁর মনে হয়েছে মেয়ে হলে ফেসবুকে অন্যরা যতটা আগ্রহ নিয়ে কথা বলেন, ছেলে হলে বলেন না। সে কারণেই তিনি এই বুদ্ধি এঁটেছেন।
ধরা পড়লে নিস্তার নেই: সংশোধিত তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ (১) ধারা লঙ্ঘন করলে ১৪ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধান আছে। এক কোটি টাকা জরিমানাও হতে পারে। কেউ ভুয়া আইডির কারণে প্রতারণার শিকার হলে তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে যেতে পারেন।
নারী সহকর্মীর ছবি ও নাম দিয়ে আইডি খুলে প্রতারণার অভিযোগে সম্প্রতি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ আটক করেন এক ব্যক্তিকে। র‌্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক এ টি এম হাবিবুর রহমান প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, র‌্যাবের কাছে অভিযোগ নিয়ে আসেন অনেকেই। র‌্যাব প্রতারণার শিকার ব্যক্তিদের সহযোগিতা করে থাকে; অনেক সময় থানায় পাঠায়।
তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফেসবুকে ভুয়া আইডি খোলা ও অন্যকে প্রতারণা করাটা ব্যবহারকারীর খারাপ দিক; এটি ফেসবুকের খারাপ দিক নয়। ভুয়া আইডির বিড়ম্বনা থেকে স্বস্তি পেতে বন্ধুত্বের অনুরোধগুলো ভালো করে যাচাই-বাছাই করে দেখা উচিত। ব্রিটেনের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইউনিভার্সিটি অব অক্সফোর্ড ইন্টারনেট ইনস্টিটিউটের সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম পারস্পরিক সম্পর্কগুলো নড়বড়ে করে দিচ্ছে। ২৪ হাজার দম্পতির ওপর করা এক জরিপ থেকে তারা এমন একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে।

Post a Comment